ওয়াহেদুজ্জামান দিপু | রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ | পড়া হয়েছে 406 বার
ছবিঃ ওয়াহেদুজ্জামান দিপু ,সম্পাদক ও প্রকাশক,নবীনগর ৭১ ডটকম
নির্বাচন মানেই উৎসব উদ্দীপনা। তবে বর্তমান সময়ে সাধারন মানুষ আর আগের মতো নির্বাচনী আমেজ পায়না বললেই চলে।
একটা সময় ছিল নির্বাচন এলেই সন্ধ্যার পর গ্রামীণ মানুষগুলো চায়ের স্টলে ব্যাপক আড্ডাবাজি খানাপিনা ইত্যাদি আরো কতো কি! তবে এখনকার সময়ে নির্বাচনে সাধারন মানুষ এই আন্দন থেকে অনেকটাই বিরত হয়ে পড়েছে!এখন নির্বাচনী প্রার্থীরা সাধারন মানুষদের আর চা পানে আগ্রহী না! নেতাদের পকেট গরম মানেই মনোনয়ন পকেটে।
বিশ্বাস অনেক বড় একটি ধারণা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ধরন ভিন্ন । অন্যের প্রতি বিশ্বাস, নিজের প্রতি বিশ্বাস, আদর্শের প্রতি বিশ্বাস, লক্ষ্যের প্রতি বিশ্বাস অনেক ধরনের বিশ্বাসের সাথেই আমরা পরিচিত।কিন্তু সব ধরনের বিশ্বাসের মধ্যেই একটা ব্যাপার কমন সাধারণ, আর তা হল, যে কোনও বিষয়ে সাফল্যের মূল ভিত্তি এটি।
যাই হোক মূল আলোচনায় আসি এবার আসছে ইউপি নির্বাচনে আপনার কাছে থাকা আমানত মূল্যবান ভোট যদি সুযোগ হয় যোগ্যতাসম্পন্ন সঠিক প্রার্থীকে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
কেননা ভোট দিবেন একদিন, সঠিক জায়গায় না দিলে কষ্ট ভোগ করবেন বছরে ৩৬৫ দিন। টাকার ছড়াছড়িতে কখনো নিজেকে বিক্রয় করে খারাপদের ভিড়ে নিজেকে সামিল করবেন না।
নিজের ওপর ও অন্যের ওপর, আদর্শ বা লক্ষ্যের প্রতি বিশ্বাস করতে পারা একজন সফল মানুষের অন্যতম গুণ । ঢালাওভাবে সবার ওপর ভরসা করা যেমন বোকামী, আবার ঢালাও ভাবে সবাইকে অবিশ্বাস করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
বুদ্ধিমানরা যাচাই বাছাই করে বিশ্বাস করেন। সফল মানুষরা সবকিছুর পরও নিজের আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি আস্থা রাখেন। এই কারণেই তাঁরা যে কোনও পরিস্থিতিতে কাজ করে যেতে পারেন এবং দিন শেষে সফল হন।
বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নিত মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের সাত ধরনের তথ্য দিতে হয়, যাতে মামলা, পেশা, প্রার্থী এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের আয়ের উৎস, সম্পদ এবং দায়দেনার বিবরণী, ঋণ ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়।
এসব তথ্য জনসম্মুখে প্রচারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রার্থীদের হলফনামায় কোনো ভুল তথ্য পাওয়া গেলে মামলা হতে পারে, প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নির্বাচনে সৎ, যোগ্য, দক্ষ প্রার্থী মনোনয়ন দেয় এবং ভোটাররা যাতে প্রার্থী সম্পর্কে জেনে, শুনে, বুঝে ভোট দিতে পারেন, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কৃতিতে হলফনামার প্রচলন হয়। যোগ্য প্রার্থী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সর্বোপরি রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার লক্ষ্যে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো অনেক জরিপ এবং যাচাই-বাছাই করে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে জিততেই হবে এই মানসিকতা কাজ করে বলে প্রার্থী মনোনয়নে ধনাঢ্য এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই অগ্রাধিকার পান।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের ভূমিকা, আইন প্রণয়ন ও আইনের দেখভাল করা হলেও আমাদের দেশে সংসদ সদস্যরা স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেই মূলত ব্যস্ত ও যুক্ত থাকেন। আইন প্রণয়নে ঘুরে ফিরে আইন প্রণয়নে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কয়েকজনই জড়িত এবং সক্রিয় থাকেন। স্থানীয় ভোটাররাও সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির কাছে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রত্যাশা করেন।
জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনের কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্য সবার অগ্রাধিকার থাকে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। স্থানীয় নির্বাচন এখন রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়; তাই স্থানীয় সৎ, যোগ্য ও সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য সাধারণ ব্যক্তিরা নির্বাচনী মাঠ থেকে বিদায় নিচ্ছেন।
স্থানীয় জনগণও এমন প্রার্থী খোঁজে, যারা প্রভাবশালী ও সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাদের এলাকার এবং জনগণের সমস্যার সমাধান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভোটাররা সরকারি বা সরকার জোটের প্রার্থীকেই বিবেচনায় নিতে চেষ্টা করেন।
স্থানীয় নির্বাচনে রাজনীতির হিসাবের চেয়ে পারিবারিক প্রভাব, স্থানীয় হিসাব-নিকাশ এখনও মূল বিবেচ্য বিষয়। বিরোধী পক্ষ সর্বদা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে থাকে সরকারি প্রার্থীর সরকারি সুযোগ নেওয়ার বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন দল প্রমাণ করতে চায়, তার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব; তাই নির্বাচন কমিশন চাইলে নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারে।
রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকরা দল কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিকেই ভোট দেন। যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন কিংবা রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার বিষয়টি তাদের কাছে ততটা বিবেচ্য নয়। রাজনীতিতে নিরপেক্ষ শিক্ষিত, সচেতন যে জনগোষ্ঠী আছে, তাদের একটা অংশ জেনে-বুঝে ভোট ক্ষমতা প্রয়োগ করে। দেশের অর্ধেক নারী ভোটারের বেশিরভাগই ঘরে থাকেন, যাদের অধিকাংশ পারিবারিক পরামর্শের ভিত্তিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
একমাত্র তরুণ জনগোষ্ঠীকেই যোগ্য প্রার্থী আন্দোলনের মাধ্যমে সচেতন ও সক্রিয় করা সম্ভব হয়। যোগ্য প্রার্থী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেই কাজ করতে হবে, যাতে তারা জেনে-শুনে ও বুঝে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। এ কাজে নেতৃত্ব দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে এ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
পাশাপাশি যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের লক্ষ্যে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থীদের নিয়ে মুখোমুখি অনুষ্ঠান করা, ক্যাম্পেইন করা, পাড়ায় পাড়ায় উঠান বৈঠক করা প্রয়োজন। যোগ্য প্রার্থী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে নির্বাচন কমিশনের অভিভাবকত্বে মিডিয়াকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও আয়োজনে নির্বাচনকালে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান হতে পারে সারাদেশে।
মুখোমুখি অনুষ্ঠান টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এতে নারীসহ ঘরকেন্দ্রিক ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে জানতে পারবেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার সম্পর্কে ধারণা পাবেন এবং নির্বাচনী বিতর্ক উপভোগ করতে পারেন। রাজনৈতিক বিবদমান পক্ষগুলো একসঙ্গে বসার, আলোচনা করার সংস্কৃতি আমাদের নেই বললেই চলে, সেখানে বিবাদমান সংসদ সদস্য, মেয়র, ওয়ার্ড মেম্বার প্রার্থীরা একমঞ্চে হাজির হলে সেটা শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতারা একসঙ্গে বসছেন, জনগণের মুখোমুখি হচ্ছেন, করমর্দন করছেন, কোলাকুলি করছেন, জনগণের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন- এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে উন্নত করবে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে এলাকায় এলাকায় রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণের মধ্যে সম্পৃতির বন্ধন সৃষ্টিতে এ অনুষ্ঠান অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে।
সব প্রার্থী হাতে হাত রেখে ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করবেন যে, তারা দ্বন্দ্ব সংঘাতবিহীন নির্বাচন করবেন। এ জাতীয় আয়োজন এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করতে সহায়তা করবে। নেতারা যখন একমঞ্চে হাজির হন, তখন অন্তত নেতৃবৃন্দ এবং তাদের কর্মীরা চোখের লজ্জায় হলেও দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়িয়ে চলবেন। ভোটাররা যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে হলে প্রার্থী সম্পর্কে জানতে হবে, কর্মপরিকল্পনা জানতে হবে। নেতা নির্বাচনে কর্মপরিকল্পনা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রার্থীরা তাদের নিজস্ব পরিকল্পনার কথা যখন সরাসরি ভোটারদের ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সামনে বলেন, ভোটাররা প্রার্থীদের চাওয়াগুলো বুঝতে এবং বিশ্লেষণ করতে পারেন। কোনো প্রার্থী শহরের সমস্যা ও জনআকাঙ্ক্ষা কতটা ধরতে পেরেছেন এবং ভোটাররা প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে কি পাবে তা সহজেই অনুধাবন করতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন সৃষ্ট সহায়ক পরিবেশে প্রার্থীরা যদি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন যে, তারা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলবেন- তা জনগণকে আশ্বস্ত করবে যে, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বন্দ্ব-সংঘাতবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান ও ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার ফলে ভোটারদের মাঝে উপলব্ধি তৈরি হবে, জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দেওয়া নাগরিক দায়িত্ব।
প্রার্থী সম্পর্কে না জেনে ভোট দেওয়াটা নাগরিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কারণ ভুল সিদ্ধান্তের জন্য অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন এবং এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ। যিনি বিজয়ী হবেন তিনি পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে একসঙ্গে এলাকাবাসীর উন্নয়ন ও অগ্রগমনে কাজ করবেন। যিনি পরাজিত হবেন, তিনি ফলাফল মেনে নেবেন ও জয়ী প্রার্থীকে কাজে সহায়তা করবেন, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের এ চিরন্তন প্রত্যাশা পূরণের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই।
ওয়াহেদুজ্জামান দিপু
সম্পাদক ও প্রকাশক,নবীনগর ৭১ ডটকম