ওয়াহেদুজ্জামান দিপু | বুধবার, ০৭ এপ্রিল ২০২১ | পড়া হয়েছে 422 বার
ছবিঃ নবীনগর ৭১
কালবৈশাখী ঝড়ের পর মাত্র কয়েক মিনিটের ‘গরম বাতাসে’ সারা বছরের খাবার যোগানের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে কল্পনা আক্তারের। এখন চিন্তা কীভাবে যোগান হবে সারা বছরের খাবারের। কীভাবেই বা চলবে সংসার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের কল্পনা আক্তার (৩৫)। ঘরে অসুস্থ স্বামী আর ছেলে মেয়ে। এবার ৪ বিঘা জমিতে ধান বুনে স্বপ্ন দেখেছিলেন ঘরে তোলার। গরম বাতাসে সে ধানই এখন চিটায় পরিণত হয়েছে তার।
শুধু কল্পনা আক্তার নয় তার মতো একই অবস্থা ওই গ্রামের ইমাম হোসেন,আবুল কালাম,বেদন মিয়া,মোহাম্মদ হাসান মিয়া সহ উপজেলার একাধিক কৃষকের। গরম বাতাসে এক রাতের মধ্যে শত শত একর জমির ধানের শীষ নষ্ট হয়েছে। কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন ‘লু হাওয়া’র কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। নবীনগর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় এ বছর ১৮ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
সোমবার (৫ এপ্রিল) সকালে কৃষকেরা তাদের জমিতে গিয়ে দেখেন সব ধান সাদা হয়ে গেছে। ক্ষেতের উঠতি বোরো ধানের শীষে যে গুলোতে কেবল ‘দুধ’ এসেছে সেই ধানের শীষ সব চিটায় পরিণত হয়ে সাদা বর্ণ ধারণ করেছে।
যেসব জমিতে ধানের ফ্লাওয়ারিং হচ্ছে সে সব জমির ধান গরম বাতাসে পুড়ে সাদা হয়ে গেছে। এতে উৎপাদনের প্রায় শতকরা বিশ ভাগ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সারা বছর কী খেয়ে দিন কাটাবেন এখন সেই চিন্তায় পড়েছেন তারা। ধার দেনা, ব্যাংক লোন ও ঋণ নিয়ে এসব কৃষকরা তাদের জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু ধান নষ্ট হওয়ায় কীভাবে ধার দেনা ও ঋণ শোধ করবেন সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।
আবুল কালাম বলেন, রবিবার রাতে কাল বৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার বইতে শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে হঠাৎ করে গরম বাতাস আসে। তখন আমরা বুঝতে পারিনি ধানের ক্ষতি হবে। সকালে রোদ ওঠার পর জমিতে গিয়ে দেখি ফুলে বের হওয়া ধানের শীষগুলো শুকিয়ে গেছে। এখন আমরা কি করবো তা বুঝে উঠতে পারছিনা। সরকার যদি সাহায্য সহযোগিতা না করে তাহলে ঋণ করে সারা বছর চলতে হবে।
নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জগলুল হায়দার বলেন, যে সমস্ত ধান গাছে ফুল বের হয়েছিল ফুলের যে রেনু থাকে হঠাৎ করে কাল বৈশাখী ঝরের তান্ডবে তা ঝরে পড়ে গেছে। আর ফুলের সাদা অংশটা ঝরে পড়ে যাবার কারনে তা আর পরাগায়ন হতে পারেনা। আর ফুলে পরাগায়ন ছারা ধানে দানা হতে পারেনা।
ওই সময়টাতে যেসব জমিতে ফুল ফুটেছিল ওই জমি গুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারা উপজেলার তেমন ভাবে ক্ষতি হয়নি, বিচ্ছিন্ন ভাবে উপজেলার বিভিন্ন যায়গায় এই ক্ষতি হয়েছে। যেই এলাকায় বাতাসের প্রবাহ বেশি ছিল সেই এলাকায় ক্ষতিটা একটু বেশি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পুরো উপজেলায় ৫/৭হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।আবার হাওর অঞ্চল গুলোতে কোন ক্ষতি হয়নি কারন তারা জমিতে আগে আগে ধান রুপন করেছিল।